ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণকে সাধারণ ভাষায় ‘দাদ’ বা ‘দাউদ’ বলা হয়ে থাকে। ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণের মতো একটি সাধারণ ও সহজ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি সারানো আজকাল ত্বকবিশেষজ্ঞদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু স্টেরয়েডসংবলিত ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের কারণে ছত্রাক এতটা শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে আজকাল এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে সারিয়ে তুলতে। অথচ ছত্রাকবিরোধী ওষুধ যথাযথভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে মাত্র সাত দিনেই রোগীকে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা যেত।
ছত্রাকের নিজস্ব শক্তি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক ছত্রাকবিরোধী ওষুধ এখন ছত্রাক নিরাময় করতে অক্ষম বলে দেখা যাচ্ছে। যার কারণে চিকিৎসকদের বারবার ওষুধ পরিবর্তন করতে হচ্ছে এবং গবেষণালয়েও তৈরি করতে হচ্ছে নতুন নতুন ছত্রাকবিরোধী ওষুধ।
স্টেরয়েডসংবলিত ক্রিম পরিত্যাজ্য
দোকানির পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ ব্যবহার করার ফলে এই সমস্যা গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। ত্বকে দাদজাতীয় কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হলেই ওষুধের দোকানির পরামর্শে কখনোই কোনো ওষুধ আক্রান্ত স্থানে লাগানো যাবে না, কেননা বেশির ভাগ ওষুধ বিক্রেতাই যে ক্রিম বা অয়েন্টমেন্টগুলো সর্বরোগের ধন্বন্তরি ওষুধ বলে মনে করে, সেগুলো মূলত স্টেরয়েড-সংবলিত হয়ে থাকে।
কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ও অ্যান্টিফাংগাল উপাদান দুটিই একসঙ্গে মিশ্রিতাবস্থায়ও পাওয়া যায়, যা স্টেরয়েডের উপস্থিতির কারণে একইভাবে পরিত্যাজ্য। মোদ্দা কথা হলো ছত্রাক সংক্রমণে কখনোই স্টেরয়েড-সংবলিত কোনো প্রলেপ ব্যবহার করা যাবে না।
নিয়ম হলো স্টেরয়েড জাতীয় উপাদান যেখানেই বা যে রোগেই প্রয়োগ করা হোক না কেন সেখানকার সমস্যা প্রথমাবস্থায় তখনকার মতো খুব দ্রুত নাটকীয়ভাবে সেরে যায়, কিন্তু ছত্রাক সংক্রমণের ক্ষেত্রে অল্প কিছুদিন পরই সেখানে নতুন করে এবং আরো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে রোগটি ফিরে আসে। কারণ স্টেরয়েড অন্য নানানরকম ত্বকের সমস্যায় বেশ ভালো ফলাফল দিলেও এটি ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসা তো নয়ই, বরং এটি এই সংক্রমণকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
স্টেরয়েডের প্রকারভেদকিছু স্টেরয়েড বেশি শক্তিশালী, কিছু মধ্যম আর কিছু থাকে অত্যন্ত কম শক্তির। স্টেরয়েড-সংবলিত মলমের মোড়কের বা তার গায়েই বেটামেথাসোন, ডেক্সামেথাসোন, হাইড্রোকর্টিসোন, ফ্লুটিকাসোন, হ্যালোবেটাসোন ইত্যাদি উপাদানের নাম লেখা থাকে। এগুলো সবই বিভিন্ন শক্তির স্টেরয়েড।
প্রয়োজন সতর্কতা
দোকানির পরামর্শে কোনো ওষুধ চোখ বুজে ব্যবহার করা যাবে না। ওষুধের উপাদানগুলো সম্পর্কে গুগল সার্চ দিলেই সেটি কোন গোত্রের তা জানা যাবে এবং একজন শিক্ষিত ব্যক্তির জন্য এটি মোটেও কঠিন কোনো কাজ নয়।ছত্রাকের মতো একটি সাধারণ রোগ সহজে সারাতে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, ওষুধ বিক্রেতার পরামর্শে নয়।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. যাকিয়া মাহফুজা যাকারিয়া
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডার্মাটোলজি
উত্তরা স্কিন কেয়ার অ্যান্ড লেজার, ঢাকা।