| মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 120 বার পঠিত
৩ নভেম্বর। মসজিদে যোহরের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হন বাবা শামীম। এদিকে, বাবাকে খুঁজে না পেয়ে দুটি আপেল হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ৬ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন। দুটি আপেলের মধ্যে একটির আপেলের অর্ধেক খেতে পারলেও বাকি অংশটুকু আর খাওয়া হয়নি তার। সাবেক গৃহশিক্ষিকার ঘরের পাশে আপেলের সেই অংশটুকু পড়ে থাকলেও নেই শুধু মুনতাহা। কে জানতো এই আপেলই ছিল মুনতাহার জীবনের শেষ খাবার। আর ওই শিক্ষিকা হবেন তার হত্যাকারী। কিন্তু কেন নিষ্পাপ এই শিশুটিকে হত্যা করা হলো, কি ছিল তার অপরাধ?
নিখোঁজের সাতদিন পর রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে বাড়ির পাশের খাল থেকে ছোট্ট মুনতাহার লাশ উদ্ধার করা হয়। সে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। এ ঘটনায় গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর শামীমার বসতঘর পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। তখন সেই ঘরে মুনতাহার হাতে থাকা দুটি আপলের মধ্যে একটি আপেল অর্ধেক খাওয়া ও অন্যটা আস্ত পাওয়া যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৩ নভেম্বর সকালে নিখোঁজের আগে মুনতাহা আক্তার জেরিন তার বাবা শামীম আহমদের সঙ্গে স্থানীয় একটি মাদরাসার ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে বাড়িতে আসে। পরে চিপস খাওয়ার জন্য ৫ টাকা চাইলে তার বাবা চিপস এনে দেন। পরে যোহরের ওয়াক্ত হওয়ায় মসজিদে নামাজে চলে যান শামীম। তখন দুটি সবুজ রংয়ের আপেল হাতে নিয়ে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মুনতাহা। এরপর থেকেই আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মুনতাহা নিখোঁজের পর দেশে-বিদেশে অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার সন্ধান চেয়ে স্ট্যাটাস দেন। পরিবারের পক্ষ থেকে সন্ধানদাতাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এছাড়া অনেকে শিশুটির সন্ধানদাতার জন্য বিভিন্ন রকমের পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। নিখোঁজের সাতদিন পর রোববার ভোররাতে ফুটফুটে সুন্দর মুনতাহাকে পাওয়া যায় কাদামাখা নিথর দেহে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সরেজমিনে মুনতাহার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকরা দেখেন, নিস্তব্ধ চারপাশ। ঘটানাস্থলের পাশে দূরন্ত মুনতাহার ছুটে চলা ও তার স্মৃতিস্মরণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন প্রতিবেশীরা। কিছু সময় পর পর ছুটে আসছেন গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ। তারা বলছেন- এমন ফুটফুটে সুন্দর ছোট মুনতাহা কি এমন অপরাধ করেছিল। যার জন্য তাকে হত্যা করা হলো?
মুনতাহার বড় বোন জেবিন বলেন, মুনতাহাকে মার্জিয়া প্রাইভেট পড়াতো। পড়ানোর সুবাদে মার্জিয়া বাড়িতে যাতায়াত করতো। অনেক সময় তাদের ঘর থেকে কাপড়চোপড় ও বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যেতো মার্জিয়া। বিষয়টি টের পেয়ে তাকে প্রাইভেট পড়াতে মানা করা হয়েছিলো। মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ বলেন, আমার মেয়েকে এভাবে মেরে ফেলবে এইটা আমার চিন্তায় আসেনি। যে মেয়েটি মুনতাহাকে হত্যা করেছে সে কয়েকমাস তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছিল। আমার মেয়েটা আপেল নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলো। সেটাও খেতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, মুনতাহা ফোন চালাতে খুব দক্ষ ছিল। মোবাইল না দিলে তাকে ৫ টাকা দিতে হয়। আমি আমার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেশবাসীকে দিলাম। সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক শর্মা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আশা করি, রিমান্ডে সব তথ্য পাওয়া যাবে।
Posted ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
manchitronews.com | Staff Reporter