শুক্রবার ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরুও থাকে না এমন ঘরে, যেখানে থাকেন বৃদ্ধ নিতাই-পদ্মরানী দম্পতি

  |   বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   155 বার পঠিত

গরুও থাকে না এমন ঘরে, যেখানে থাকেন বৃদ্ধ নিতাই-পদ্মরানী দম্পতি

পলিথিন, বস্তা আর বাঁশ দিয়ে কোনোমতে ঘিরে রাখা রেখেছেন বসতঘর। হেলে পড়েছে পুরো ঘরটি। জরাজীর্ণ অবস্থা দেখলে যে কেউ মনে করতে পারেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোনো এলাকা। অথচ জরাজীর্ণ এই বসতঘরে প্রায় ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বসবাস করছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘলবাড়ি গ্রামের নিতাই-পদ্মরানী দম্পতি।

দিনে রোদের ঝাঁঝালো আলো, আর রাতে চাঁদের আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হলেও সুখ জোটেনি এই বৃদ্ধ দম্পতির কপালে। ঘর মেরামত করার সামর্থ্যও নেই দরিদ্র পরিটারটির। একটু সুখ ও স্বস্তির আশায় নতুন ঘরের জন্য ঘুরেছেন দ্বারে দ্বারে। কিন্তু মেলেনি কোনো সহযোগিতা।

স্থানীয়রা জানান, একসময় চা স্টল ছিল নিতাই কর্মকারের। ভালোই চলতো চায়ের দোকান। কিন্তু হটাৎ করইে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। চলাফেরা করতে অসুবিধা হওয়ায় সময়মতো খরিদ্দারের কাছে পৌঁছাতে সমস্যা হওয়ায় ভিড় কমতে থাকে দোকানে। অনেকটাই গৃহবন্দী হয়ে পড়ের নিতাই কর্মকার। স্থানীয় এক ব্যক্তি সেই দোকান মাসে ৫শ’ টাকা দেওয়ার কথা বলে ভাড়া নেন। কয়েকমাস দিলেও এখন আর সেখান থেকে কোনো টাকা পাওয়া যায় না।

ক্রমেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন নিতাই কর্মকার। জেঁকে বসে দরিদ্রতা। চোখের ছানি অপারেশন করাতে পারেননি টাকার অভাবে। এখন তিনি অন্ধ হওয়ার পথে। একমাত্র সন্তান সুজন সেলুনে কাজ করে যা আয় করেন সেটা দিয়েই পরিবারের হাল ধরেছেন। কিন্তু বাবা-মায়ের বসতঘর মেরামত করার সামর্থ্য নেই তার। সীমাহীন কষ্টে জীবনযাপন করছেন নিতাই-পদ্মরানী দম্পতি।

সরেজিমন গিয়ে দেখা যায়, হেলে পড়েছে টিনের ছাপড়ার ঘরের এককোণে চোকির ওপর শুয়ে আছেন নিতাই কর্মকার। তীব্র রোদের আলোয় পুরো ঘর আলোকিত। ভেঙে পড়া পুরোনো টিনকে বেশকিছু বাঁশ দিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। জানালা-দরজাও ভাঙা।

বৃষ্টি থেকে মুক্তি পেতে সেই ভাঙাচোরা টিনের চালে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। শুধু কী তাই, টয়লেট থাকলেও নেই কোনো বেড়া! লজ্জা নিবারণে একপাশে কোনো মতে পলিথিনের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি।

কান্নাজড়িত কন্ঠে এই প্রতিবেদককে নিতাই কর্মকার বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি আসলে বুড়িকে (স্ত্রী) নিয়ে অন্যের বাড়িতে যাই। কেউ আশ্রয় দেয় আবার কেউ বা দেয় না। আশ্রয় না পেলে ঘরের এককোণে চুপ করে বসে থাকি। বৃষ্টিতে ভিজি। রাত জেগে বসে থাকতে হয়। গরু রাখার গোয়াল ঘরও এরচেয়ে ভালো হয়।’

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিমকে জানানো হলে তিনি বলেন, বিষয়টি খুব কষ্টের। আপাতত নতুন করে কোনো ঘরের বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook Comments Box

Posted ১:৪১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

manchitronews.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক
এ এইচ রাসেল
Contact

5095 Buford Hwy. Atlatna Ga 30340

17709121772

deshtravels7@gmail.com

error: Content is protected !!