শুক্রবার ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা জেলে,মা কবরে- তিন বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে সাজ্জাদ

  |   মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   61 বার পঠিত

বাবা জেলে,মা কবরে- তিন বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে সাজ্জাদ

একমাস আগে জন্ম নেয় সাজ্জাদ মোল্লার (১৩) যমজ দুই বোন। তার এক সপ্তাহ পর মারা যান মা। শুক্রবার রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দি হন সাজ্জাদের দিনমজুর বাবা জামাল মিয়া। এতে সদ্যজাত দুই বোনসহ তিন বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে শিশু সাজ্জাদ। যমজ বোনদের মুখে দিতে পারছে না দুধও। সাজ্জাদ গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার চিত্রাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার বড় সন্তান। স্থানীয় এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামাল মিয়া পেশায় একজন দিনমজুর। একমাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম যমজ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসহ চার ছেলে মেয়ে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জামাল মিয়া। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালন পালন করে দিন কাটছিল তার।

এ অবস্থায় গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায়।

জামাল মিয়ার ভাই মনির মিয়া বলেন, আমার ভাই বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নেই। এক সময় সে আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল। পুলিশ কী কারণে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে তা আমাদের জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, ভাইয়ের প্রথম সন্তান সাজ্জাদ মিয়া এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া চিত্রাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়াও এক মাস বয়সী দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে তার। এই দুই সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় জামালের স্ত্রী সাথী বেগম মারা যায়। বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনাও জামালই করতো। এখন জামালের চার শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।

প্রতিবেশী কাইয়ুম মিয়া বলেন, জামাল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তারপরও তাকে কেন একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হলো জানা নেই। জামালের অবুঝ চার শিশু সন্তানের দায়িত্ব এখন কে নেবে? জামালকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিক। চার শিশু সন্তান ও অসুস্থ মায়ের দিকে তাকিয়ে আমারা এলাকাবাসী জামালের মুক্তির দাবি জানাই।

জামালের ছেলে সাজ্জাদ মিয়া জানায়, কয়েকদিন পরই আমার বর্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতেও পড়তে পারি না। আমার স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি কে দেবে? আমার একমাস বয়সী দুই বোনের দুধের টাকা কে দেবে? আজ তিনদিন আমাদের চুলা জ্বলে না। বাড়ির আশপাশের লোকজন আমাদের খাওন দিচ্ছে, এভাবে কয়দিন চলবে? আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে। আমরা আমাদের বাবাকে ফেরত চাই।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামাল মিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল বলে আমরা জেনেছি। গত শুক্রবার তাকে আটক করে দিদার হত্যা মামলায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় পাঠানো হয়। সেখানে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

manchitronews.com |

সম্পাদক
এ এইচ রাসেল
Contact

5095 Buford Hwy. Atlatna Ga 30340

17709121772

deshtravels7@gmail.com

error: Content is protected !!