| সোমবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট | 222 বার পঠিত
নানা কারণে অনেক শিশুর মধ্যে গুটিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে শিশুরা চটপটে হয়। পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার। লিখেছেন আতিফ আতাউর
বাসায় আত্মীয়-স্বজন এলে অনেক শিশু সামনে আসতে চায় না। বাইরে কোথাও গেলে অপরিচিত লোকের সামনে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। এমনকি খেলার সঙ্গী, সহপাঠী ও সমবয়সীদের সঙ্গে অনেক শিশু মিশতে চায় না। শিশুদের মধ্যে এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত তাদের স্বভাবে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে হবে।ছোট থেকে চটপটে ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে পারলে বড় হয়ে জীবনের নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করাটা তার পক্ষে সহজ হবে।
দ্রুত ফল চাইবেন না
শিশুর মিশুক না হওয়া কোনো অক্ষমতা বা সমস্যা নয়। চঞ্চলতা বা চটপটে স্বভাব যেমন একটা চারিত্রিক ধরন, এটাও সে রকম। শিশু কারো সঙ্গে না মিশলে অনেক মা-বাবা লজ্জা পান।লাজুক বেশি, মিশতে পারে না—এমন কথা শুনতে হয়। এ নিয়ে শিশুকে বকাঝকা করেন। শিশুমনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ জন্য ধৈর্য ধরে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।ধীরে ধীরে শিশুকে মিশুক বানাতে হবে।
শিশুকে বোঝার চেষ্টা করুন
নানা কারণে শিশুর মধ্যে লাজুকতা ভর করে। এ নিয়ে মা-বাবার চিন্তার শেষ থাকে না। তাঁরা চান শিশু চটপটে হোক। প্রত্যাশার পাশাপাশি শিশুমনকেও বোঝার চেষ্টা করতে হবে।অযথা বকাঝকা করলে শিশু আরো বেশি গুটিয়ে পড়তে পারে। অন্তর্মুখী শিশুদের বোঝা একটু কঠিন। এ জন্য সময় নিয়ে সন্তানকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। শিশুকে বুঝতে পারলে তার স্বভাবে বদল আনা সহজ হয়।
সামাজিক পরিমণ্ডলে অভ্যস্ত করুন
শিশুকে গুটিয়ে রাখবেন না। দীর্ঘ সময় শিশুকে একা একা রাখবেন না। মিশুক না বলে কোথাও নিয়ে যেতে ইতস্তত বোধ করবেন না। মিশতে পারিস না, কোথাও তোকে নিয়ে যেতে মন চায় না—এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। বিয়ে, বউভাত, জন্মদিন, পার্টিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সন্তানকে নিয়ে যান। সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে শিশুকেই উত্তর দিতে দিন। নিজ থেকে সাহায্য করতে যাবেন না। এতে ধীরে ধীরে সামাজিক পরিমণ্ডলে অভ্যস্ত হতে শিখবে শিশু।
শিশুকে মিশতে উৎসাহ দিন
শিশুকে সহপাঠী, বন্ধু ও সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে উৎসাহ দিন। টিফিন ক্যারিয়ারে বাড়তি খাবার দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে খেতে বলুন। এমন সব খেলনা কিনে দিন, যেগুলো মিলেমিশে খেলতে হয়। বড়দের সঙ্গে দেখা হলে কুশলবিনিময় করতে শেখান। অতিথি আপ্যায়নে তার সাহায্য নিন। শিশুর কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিন। শিশুরা মনোযোগ চায়। এতে ধীরে ধীরে মিশুক হয়ে উঠবে শিশু।
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব
শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন, যেন আপনাকে ভরসা করতে পারে। এতে মন থেকে শিশু আপনার কাছে সব খুলে বলবে। ওকে যেভাবে দেখতে চান নিজে সে রকম আচরণ করুন। শিশুর সঙ্গে মজার মজার গল্প করুন, আড্ডা দিন। শিশুকে কারো সঙ্গে তুলনা করবেন না। সৃজনশীল কাজে সুযোগ দিন শিশুর আগ্রহের বিষয়ে প্রাধান্য দিন।
নাচ, গান, অভিনয়, কবিতা, ছবি আঁকাসহ যে বিষয়টিতে শিশু বেশি আগ্রহ বোধ করে তাতে যুক্ত করে দিতে পারেন। এসব বিষয়ের স্কুল, কোচিংসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিশুকে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিন। এর মাধ্যমে শিশু নিজের গণ্ডির বাইরে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
পারিবারিক বন্ধন অটুট করুন
মা-বাবার বিরূপ সম্পর্ক, পারিবারিক সমস্যা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মুখোমুখি হওয়া ইত্যাদি শিশুমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ রকম পরিবেশে শিশুরা সব কিছু থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কারো সঙ্গে মিশতে চায় না। একা থাকতে চায়। পারিবারিক সম্পর্ক অটুট রাখার চেষ্টা করুন। যে পরিবার যত হাসিখুশি সেই পরিবারের শিশুরা এমনিতেই মিশুক, আত্মবিশ্বাসী ও পরোপকারী স্বভাবের হয়।
Posted ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৩
manchitronews.com | Pabitra talukder