এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক হাজার ৭৯০ জন আহত হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জিম্মি করারও দাবি করেছে।
বিমান হামলায় গাজার ‘প্যালেস্টাইন টাওয়ার’ নামের ১১ তলা ভবনসহ বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটির ছাদে হামাসের বেতারকেন্দ্র ও একটি সিনেমা হল ছিল। বিমান হামলার কিছু পরই এটি ধসে পড়ে।ইসরায়েলি পক্ষে প্রায় এক হাজার লোক আহত হয়ে হাসপাতালে আছে বলে গতকাল রাতে জানানো হয়। হামাস বলেছে, ‘যথেষ্ট হয়েছে।আর না’—এই নীতিতে তারা ইসরায়েলি দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে একের পর এক রকেট ছুড়তে থাকে হামাস। তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি শহরকে লক্ষ্য করে কয়েক হাজার রকেট ছোড়া হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু রকেট আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে বেশ কয়েকটি ভবনে আঘাত হানে।
হামাসের যোদ্ধারা গাড়ি, নৌযান ও মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে স্থল, জল ও আকাশপথে গাজার পাশের ইসরায়েলি শহর ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এ সময় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে তাদের বেশ কিছু জায়গায় বন্দুকযুদ্ধ হয়। আতঙ্কিত ইসরায়েলিরা এ সময় বাংকারে আশ্রয় নেয়।
বেশ কয়েকজন ইসরায়েলিকে বন্দি করার দাবি করেছে হামাস। এসংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে গোষ্ঠীটি। এতে তিনজন বেসামরিক লোককে দেখা গেছে।একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হামাসের কয়েকজন সশস্ত্র যোদ্ধা ইসরায়েলি শহরের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে পশ্চিম তীরের প্রতিরোধযোদ্ধাদের পাশাপাশি আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রগুলোকে এই যুদ্ধে শরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছে হামাস।
ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে আছে : নেতানিয়াহু
এদিকে ইসরায়েলি জনগণের উদ্দেশে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে আছে। গাজার শাসক হামাসের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের এমন মূল্য দিতে হবে, যা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।
এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, শনিবার সকালে হামাস ইসরায়েল ও এর নাগরিকদের বিরুদ্ধে অকস্মাৎ প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার সন্ত্রাসীদের নিশ্চিহ্ন করা হবে বলে ঘোষণা করে বলেছে, বিমান হামলার পর সেখানে সেনা অভিযান চালানো হবে।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইসরায়েল ও গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। এই সংঘাতে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে—আমরা ইসরায়েল সরকার ও জনগণের সঙ্গে আছি।
মার্কিন সামরিক প্রধান লয়েড অস্টিন বলেছেন, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে নাগরিকদের রক্ষার জন্য ইসরায়েলকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে প্রতিরক্ষা বিভাগ।
ইসরায়েলের মিত্র ন্যাটো জোট ও ইউরোপীয় কমিশন এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ন্যাটো বলেছে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউক্রেন, চেক প্রজাতন্ত্র, বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, পোল্যান্ড ও স্পেন হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে থাকা সৌদি আরব ও মিসর অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়াও সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধান শত্রু ইরান হামাসের হামলায় সমর্থন দিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা রহিম সাফাভি বলেছেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’ সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা