
মানচিত্র ডেস্ক | বুধবার, ০৭ অগাস্ট ২০১৯ | 498 বার পঠিত | প্রিন্ট
ছবি-সংগৃহীত
পোকার আইসক্রিম। দামও অনেক। শুনেই অনেকের গা গুলিয়ে উঠবে। খাওয়া তো দূরের কথা। কিন্তু সেই আইসক্রিমই মানুষ খাচ্ছে! কিন্তু ঘটনাটা অন্যরকম। জাতিসংঘের অনুমান বিশ্বে লাগামছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যতে ‘বাগ ফুড’ বা পোকামাকড়ের উপরই ভরসা রাখতে হবে। সম্ভবত সেই পথে পা বাড়াল দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আইসক্রিম প্রস্তুতকারী সংস্থা।
গনগনে গরমে রোদে পুড়ে বাড়ি ফিরলেই মনে হবে আইসক্রিম খাই। কিন্তু আইসক্রিমে কামড় দেওয়ার আগে কেউ যদি বলে এই আইসক্রিম তৈরি হয়েছে ‘বাগ মিল্ক’ বা পোকামাকড়ের দুধ থেকে, তখন আপনি কী করবেন? দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন অঞ্চলের ‘গুরমে গ্রাব’ নামের একটি স্টার্ট আপ সংস্থা ইতিমধ্যেই এই ধরনের আইসক্রিম তৈরি করে মানুষের দরবারে এনে হাজির করেছে।
এই লাক্সারি আইসক্রিম তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘এনটো মিল্ক’, যা ডেয়ারি মিল্কের বিকল্প হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। কীভাবে তৈরি হচ্ছে এই এনটো মিল্ক? ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই নামের এক বিশেষ প্রজাতির ট্রপিক্যাল পতঙ্গের লার্ভা থেকে তৈরি হচ্ছে এই দুধ। জাতিসংঘের অনুমান, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা যেখানে পৌঁছাবে, তাদের আজকের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ খাদ্য দ্রব্যের প্রয়োজন হবে। আর এই কারণেই তারা ইনসেক্ট ফার্মিং বা পোকামাকড়ের চাষ বিকল্প প্রোটিন হিসেবে অনুমোদন করছে।
২০১৭ সালে তৈরি হওয়া ‘গুরমে গ্রাব’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা লি বেসা বলেছেন, ‘এতদিন পোকামাকড়কে যে চোখে দেখা হত, আমরা সেটা বদল করতে চেষ্টা করছি। এবং এই কারণেই ফুড ইন্ডাস্ট্রিতেও পোকামাকড়ের ব্যবহার করা শুরু করেছি।’
যদিও সারা পৃথিবী ব্যাপী ১৯০০ প্রজাতির ইনসেক্ট বা পোকামাকড় মানুষ খেয়ে থাকে, তবুও এখনও পর্যন্ত মূলস্রোতের পাশ্চাত্য ক্যুইজিনে পোকামাকড় এখনও তেমনভাবে প্রবেশ করতে পারেনি।
লি বেসা বলেছেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম অনেক বেশি ধাক্কা খাবো, কিন্তু দেখা যাচ্ছে মানুষ ইতিমধ্যেই অনেক খোলা মনের হয়ে গেছে। আর এটা তো সত্যি কথা যে প্রত্যেকেই আইসক্রিম ভালোবাসেন।’
যে যে ফ্লেভারে বা স্বাদে আইসক্রিম তারা বাজারে ছেড়েছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে চকলেট, পি-নাট বাটার এবং ক্রিসমাস স্পাইসেস।
লি বেসার মতে, এই এনটো মিল্কে মাটির গন্ধ থাকলেও, রয়েছে এক ধরনের ক্রিমের মতো স্বাদ। তার মতে, এনটো মিল্ক ডেয়ারি মিল্কের তুলনায় ৫ গুণ বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ।
জাতিসংঘের মতে, পোকামাকড়ের থেকে যে ধরনের নিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায় তা সহজেই মাংস এবং মাছের সঙ্গে তুলনীয়। বেসা বলেছেন, ‘পোকামাকড়ের মধ্যে রয়েছে প্রভূত পরিমাণে ফ্যাট, প্রোটিন এবং মিনারেল। ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের মধ্যে যে পরিমাণ এবং ফ্যাট রয়েছে তার সঙ্গে সহজেই তুলনীয় শুয়োরের মাংস। জিঙ্ক, আয়রন এবং ক্যালসিয়ামও শুয়োরের মাংসের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও এনটো মিল্ক ল্যাকটোজ মুক্ত এবং গ্লুটেন মুক্ত। ডেয়ারি মিল্কের মতো এই দুধে কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি নেই।
বেসা আরও বলেছেন, ‘আমরা ফুড ইন্ডাস্ট্রির সেই জায়গায় নজর দিতে চাইছি, যেখানে অনেক চাপ রয়েছে। অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার এবং পরিবেশগত ব্যাপারের সমস্যা। পোকামাকড়দের নিয়ে অতটা সচেতনতা নেই। তারা সেই সমস্ত পরিবেশেই জন্মগ্রহণ করে যেখানে তারা বাঁচতে পারে। তাই এই ধরনের পোকামাকড়ের ফার্মিং করা ততটা অসুবিধের নয়।’
গুরমে গ্রাবের মতে ডেয়ারি মিল্কের চেয়ে এনটো মিল্কে রয়েছে অনেক বেশি জল এবং এনার্জি। বেসা-র মতে, ‘পোকামাকড়দের বেঁচে থাকতে খুবই কম পানির প্রয়োজন হয়, জায়গাও কম লাগে। পাশাপাশি প্রথাগত লাইভস্টকের মতো তারা কোনও গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি করে না।’
যেহেতু পোকামাকড়দের চাষ করার জন্য খুব কম জায়গা এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ প্রয়োজন, তাই তাদের সহজেই শহুরে অঞ্চলে চাষ করা সম্ভব। এবং এই কারণেই পোকামাকড়ের দুধ শহরে নিয়ে আসার জন্য কোনও খরচ করতে হয় না।
সম্প্রতি গুরমে গ্রাব-এর আইসক্রিম পাওয়া যাচ্ছে কেবলমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাতেই। কিন্তু ২০২৩ সালের মধ্যে গ্লোবাল এডিবল ইনসেক্টস মার্কেটের (খাওয়ার যোগ্য পোকামাকড়ের বাজার) যে চেহারা দাঁড়াবে, তা হল ১.২ বিলিয়ন ডলার।
গত মাসে গুরমে গ্রাব একটি ‘কনসেপ্ট পপআপ স্টোর’ খুলেছে। সেখানে আইসক্রিমের পাশাপাশি তারা বিক্রি করছেন চিকপি ব্ল্যাক-লার্ভা ক্রকেটস এবং মোপানি ওয়ার্ম হামাস।
Posted ২:১৪ পিএম | বুধবার, ০৭ অগাস্ট ২০১৯
manchitronews.com | humayun kabir