পাবনা প্রতিনিধি | ০১ জুন ২০১৮ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ
একসময়ের মেধাবী ছাত্র বাবুল হোসেন। বছর চল্লিশের তরতাজা যুবক বাবুলকে এখন শেকল বন্দি হয়ে থাকতে হয়। নেই শোবার ঘর; ভাঙ্গাচোরা টিনের ঘরে নোংরা পরিবেশে মধ্যে দিন রাত কাটে তার। পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বেজপাড়া গ্রামের নূরুল সরকার ও আনোয়ারা বেগমের মেজ ছেলে বাবুল। বাবুলকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই বৃদ্ধ বাবা-মা’র। তার চিকিৎসার ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ দুই ভাইয়ের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ভাঙ্গাচোরা টিনের ঘরে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বাবুলকে। বাড়িতে লোকজন এলেই সবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে সে। উৎকট গন্ধের মধ্যে বাবুলের ছোট ভাই গাজিউর সরকারের মুরগির খামারের পাশে তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। বিষয়টি অমানবিক হলেও পরিবারের কাছে এগুলো কিছুই মনে হয় না! অথচ আজ থেকে ২০ বছর আগে সে ছিল একজন সুস্থ স্বাভাবিক ছেলে। উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মহেলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দিয়েছিলেন এসএসসি পরীক্ষা। অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মা’র পক্ষে চিকিৎসা করানোও সম্ভব নয়।
বাবা নূরুল সরকার জানান, এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর বাবুল একই এলাকার এক মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। রাজি না হওয়ায় তার মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এরপর যাকে তাকে মারপিট করা, অন্যের জমির ফসল নষ্ট করাসহ নানা কারণে তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এরআগে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে (বাবুল) এক সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তো। পড়াশোনায়ও ভাল ছিল। কিন্তু হটাৎ ছেলের পাগল হয়ে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হয়। ওর পাশে কেউ আসতে চায় না। আমাকেই সবকিছু করতে হয়। আমারও তো বয়স হয়েছে। আমি মরে গেলে ওকে কে দেখবে?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘বাবুল নামের ওই মানসিক প্রতিবন্ধীর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তাকে শেকল মুক্ত করা এবং সেই সাথে তার সুস্থ্যতা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’